• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জৈষ্ঠ ১৪২৯

শিক্ষা

সেই শিক্ষা কর্মকর্তা এবার সাংবাদিকদের দেখে নেয়ার হুমকী দিল

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১০ জুলাই ২০২৩

আবু হাসান শেখ, কিশোরগঞ্জ(নীলফামারী)প্রতিনিধি:
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার সাখাওয়াৎ হোসেন ঠিকভাবে অফিস করছে না এমন অভিযোগের ভিত্তিতে আজ রোববার দুপুর ২টা ২৭ মিনিটে সাংবাদিকরা ওই কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করলে তিনি রেগে গিয়ে সাংবাদিকদের দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। এছাড়া তিনি বলেন আমি কয় মাস অফিসে উপস্থিত থাকি, না থাকি তোমরা (সাংবাদিকরা) দেখার কে? এটি তোমাদের (সাংবাদিকদের) দেখার বিষয় না! সম্প্রতি ওই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বেশ ক’টি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। এর প্রেক্ষিতে তদন্তও সম্পন্ন হয়েছে। এ অসন্তোষ থেকেই তিনি সাংবাদিকদের গালিগালাজ ও দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে গণমাধ্যমকমীর্রা মনে করছে। এছাড়া ঈদের আগে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানোকে কেন্দ্র করে ওই সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার উপজেলা শিক্ষা অফিসের তদন্ত কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত সকল কর্মকর্তাকে প্রকাশ্যে গালিগালাজ করেছে বলে উপজেলা চেয়ারম্যানকে মৌখিকভাবে উপজেলা শিক্ষা অফিসের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার সাখাওয়াৎ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে ঠিকভাবে অফিস করছেন না এ অভিযোগ অনেক দিন ধরেই উঠে আসছে। এছাড়া তিনি মন্ত্রি পরিষদ বিভাগের ২০২৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখের জারিকৃত আদেশটিকেও দেখাচ্ছেন বৃদ্ধাগুলি। ওই আদেশটিতে বলা হয়, সেবাগ্রহণকারী নাগরিকদের সুবিধা এবং সরকারি কর্মকান্ডে গতিশীলতা ও সমন্বয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ জনস্বার্থে আবশ্যিকভাবে সকাল ৯ ঘটিকায় অফিসে এসে অত্যাবশ্যকীয় ভাবে ৯টা ৪০ ঘটিকা পর্যন্ত অফিসে অবস্থান করে অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। মন্ত্রি পরিষদ বিভাগের সে আদেশটি অমান্য করে নিজের খেয়াল খুশি মত অফিসে আসে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে খেঁাজখবর নিয়ে সাংবাদিকরা জানতে পারে ওই সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কোন দিন দুপুর ১২ টা, কোন দিন দুপুর ১ টা আবার কোন দিন দুপুর ২ টায় অফিসে আসেন। সম্প্রতি তিনি ক’দিন ধরে অফিসে আসছেন না বলে অভিযোগ উঠে। এমন অভিযোগ উঠায় সাংবাদিকরা আজ রোববার (৯ জুলাই) দুপুর ২টায় উপজেলা শিক্ষা অফিসে গিয়ে খেঁাজখবর নিয়ে জানতে পারে তিনি বেশ ক’দিন ধরে অফিস করছেন না। এসময় উপজেলা শিক্ষা অফিসার নুর মোহাম্মদের সাথে কথা হলে তিনি সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি অফিসে এখন পর্যন্ত আসেননি বলেও জানান। উপজেলা শিক্ষা অফিসার তাৎক্ষনিক অফিসে খেঁাজ নিয়ে জানতে পারেন যে, ওই সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার তিন দিনের ছুটির দরখাস্ত দিয়েছেন। তবে সে বিষয়টি আবার উপজেলা শিক্ষা অফিসার অবগত নন। আবার তিন দিনের ছুটির আবেদন দিয়ে পাঁচ দিন ধরে অফিসে নেই বলে উপজেলা শিক্ষা অফিসের একটি সূত্র দাবি করেছে। অন্যদিকে উপজেলা শিক্ষা অফিসার হাজিরা খাতায় দেখেন ওই সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বেশ ক’দিনের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর নেই। পরবতীর্তে সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার সাখাওয়াৎ হোসেনের মুঠোফোনে সাংবাদিকরা ফোন দিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন— অফিসে উপস্থিত আছি কিনা আপনাদের (সাংবাদিকদের) কি দরকার। এছাড়া তিনি বলেন, আমি কয় মাস অফিসে উপস্থিত থাকি, না থাকি তোমরা (সাংবাদিকরা) দেখার কে? এটি তোমাদের (সাংবাদিকদের) দেখার বিষয় না বলে বলেন থাকেন অফিসে আসছি। পরে ওই কর্মকর্তা দুপুর ২ টা ৪৫ মিনিটে অফিসে আসেন। তার মোটর বাইক থেকে নেমে ফোন দেয়া দৈনিক ইনকিলাবের কিশোরগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি আব্দুর রউফ হায়দার, বায়ান্নর আলোর উপজেলা প্রতিনিধি সাকিল ইসলামকে দেখে বলেন আমি অফিস করি, না করি আপনারা (সাংবাদিকরা) দেখার কে? আমি আপনাদের (সাংবাদিকদের) দেখে নিব বলে হুমকি দেন। এসময় বাংলাদেশ খবরের উপজেলা প্রতিনিধি আবু হাসান শেখ ওই সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করা শুরু করলে তিনি দ্রুত অফিসে প্রবেশ করে অফিস সহকারির রুমে চলে যান। ধারণা করা হচ্ছে ওই সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার তার রুমে না গিয়ে অফিস সহকারির রুমে গিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়েছেন।

সম্প্রতি “শিক্ষিকা থাকেন ঢাকায়, হাজিরা খাতায় উপস্থিত বিদ্যালয়ে” শিরোনামে বেশ ক’টি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে উপজেলা প্রশাসনের তরফ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি’র তদন্ত প্রতিবেদন উর্দ্ধতন কর্তপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যদিকে উপজেলা শিক্ষা অফিস তরফ থেকে অপর একটি তদন্ত দল তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন উদ্ধর্তন কতৃর্পক্ষের নিকট পাঠিয়েছে। দু’টি তদন্ত প্রতিবেদনে ওই ঘটনায় সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াৎ হোসেন ওতোপ্রোতভাবে জড়িত প্রমানিত হয়েছে বলে জানা গেছে। অপর একটি সূত্র জানায়— সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন ওই ঘটনার সাথে জড়িত থেকেও তিনি নিজেই উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে কোন কিছু না জানিয়েই উর্দ্ধতন কতৃর্পক্ষের কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছিল। যা উর্দ্ধতন কতৃর্পক্ষ আমলে নেয়নি বলে সুত্রটি দাবী করেন।
অন্যদিকে একটি সূত্র জানায়— তদন্তের সময় কেঁাচো খুঁড়তে গিয়ে বেড়িয়েছে সাপ। ওই বিদ্যালয়ে গত ৩ মার্চ পরিদর্শনে গিয়ে কোন শিক্ষককে বিদ্যালয়ে উপস্থিত পাননি সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার সাখাওয়াৎ হোসেন। তিনি আবার ২৩ মার্চ ওই বিদ্যালয়ে সকালে পরিদর্শনে যান। বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষককে পাননি। পরবতীর্তে একই দিন এ সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবারও ওই বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে যান। এসময় তিনি সকলকে উপস্থিত পান বলে একটি শোকজ পত্রে উল্লেখ করেছেন। দেরিতে বিদ্যালয়ে আসার কারণে শিক্ষকগণদের ২৭ মার্চ একটি পত্রের মাধ্যমে শোকজ করেন এবং তিন কার্য দিবসের মধ্যে যথাযথ কারণসহ ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু এ বিদ্যালয়ে কর্মরত ৬ জন শিক্ষক থাকলেও ওই শোকজ পত্রে ৫ জন শিক্ষককে শোকজ করা হয়। দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকা শামীমা নওরিন জ্যোতিকে রাখা হয় আরালে। এমনকি তাকে কোন রকম শোকজ করা হয়নি। এছাড়া তাকে বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবেও ওই চিঠিতে দেখানো হয়নি। আবার প্রতি মাসে বেতন দাখিলের সময় যে রিটার্ন দাখিল করতে হয়। সেই রির্টানে ঠিকই শামীমা নওরিন জ্যোতিকে শিক্ষিকা হিসেবে দেখান এ সহকারি শিক্ষা অফিসার শাখাওয়াৎ হোসেন। বেতন রির্টানে শামীমা নওরিন জ্যোতির স্বাক্ষরের ঘরগুলো ফাঁকা থাকলেও বেতনের সুপারিশ করেন এ সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার। এসব ঘটনা তদন্তে উঠে এসেছে বলে জানা গেছে। সেই থেকে উপজেলা শিক্ষা অফিসের সকল অফিসারকে সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার গালিগালাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সাংবাদিকরা এ বিষয়ে প্রতিবেদন ছাপায় এবার সাংবাদিকদের প্রকাশ্যে হুমকী দিল ওই সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার সাখাওয়াত হোসেন। দেখে নেয়ার হুমকিও দিয়েছেন। এ কর্মকর্তার এমন আচরণে অবাক সচেতন মহল। সচেতন মহলের প্রশ্ন আসলে ওই কর্মকর্তার খুঁটির জোড় কোথাঁয়?
উপজেলা শিক্ষা অফিসার নুর মোহাম্মদ জানান— সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার সাখাওয়াত হোসেন বেশ ক’দিন ধরে অফিসে আসছে না। ওনি ছুটির আবেদন দিয়েছে তাও আমার জানা ছিল না। আমি বিষয়টি দেখছি।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির সদস্য রবিউল ইসলাম বাবু জানান— “শিক্ষিকা থাকেন ঢাকায়, হাজিরা খাতায় উপস্থিত বিদ্যালয়ে” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। এ ঘটনার মূল হোতা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার সাখাওয়াত হোসেন। এর সাথে জড়িত পুটিমারী ঝাকুয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার দু’ জন সহকারি শিক্ষিকাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করাকে কেন্দ্র করে ওই সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শিক্ষা অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তাকে গালিগালাজ করেছে এটি শুনে আমি অবাক হয়েছি। এছাড়া সাংবাদিকদের দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছে যা দুঃখজনক।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর—ই—আলম সিদ্দিকীর সাথে কথা হলে বলেন— আমি নীলফামারী থেকে ফিরছি। বিষয়টি দেখবো। তবে তিনি একজন কর্মকর্তা হয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ কেন করছেন তার ব্যাখ্যা আমরা চাইবো।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads